
ভূমিকা:
খাদ্যের পেছনের বিজ্ঞান সম্পর্কে শিশুদের শেখানো হতে পারে মজাদার এবং শিক্ষণীয়। সহজ ও মজার কিছু পরীক্ষা করে তারা খাদ্যের গঠন, প্রস্তুতি, এবং প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। আজ আমরা কিছু মজাদার খাদ্য বিজ্ঞান পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করব, যেমন ঘরে তৈরি আইসক্রিম তৈরি করা বা ইস্টের মাধ্যমে রুটি ফুলিয়ে তোলা।
১. ঘরে তৈরি আইসক্রিম তৈরি করার বিজ্ঞান
এই পরীক্ষাটি শিশুদের শেখাবে কীভাবে তাপমাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে তরল থেকে কঠিন হওয়ার প্রক্রিয়া ঘটে।
উপকরণ:
- ১ কাপ দুধ বা ক্রিম
- ২ টেবিল চামচ চিনি
- ১/২ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স
- বরফ
- ১/৪ কাপ লবণ
- ২টি সীলযুক্ত জিপ-লক ব্যাগ (একটি ছোট এবং একটি বড়)
প্রস্তুত প্রণালী: ১. ছোট জিপ-লক ব্যাগে দুধ, চিনি, এবং ভ্যানিলা এসেন্স মেশান এবং সিল করুন।
২. বড় জিপ-লক ব্যাগে বরফ এবং লবণ মেশান।
৩. ছোট ব্যাগটি বড় ব্যাগের মধ্যে রাখুন এবং ব্যাগটি ভালোভাবে বন্ধ করুন।
৪. প্রায় ৫-১০ মিনিট ধরে ব্যাগটি ঝাঁকাতে থাকুন।
৫. ব্যাগটি খুলে দেখুন, তরল দুধ জমে আইসক্রিমে পরিণত হয়েছে!
বিজ্ঞান: লবণ বরফের গলনাঙ্ক কমিয়ে দেয়, ফলে বরফের চারপাশে তাপ শোষিত হয় এবং দুধের মিশ্রণটি দ্রুত ঠান্ডা হয়ে আইসক্রিমে রূপান্তরিত হয়।
২. ইস্টের সাহায্যে রুটি ফুলিয়ে তোলা
এই পরীক্ষাটি দেখায় কীভাবে ইস্ট একটি জীবন্ত ফাংগাস হিসেবে কাজ করে এবং রুটি ফুলতে সাহায্য করে।
উপকরণ:
- ১ কাপ ময়দা
- ১ টেবিল চামচ ইস্ট
- ১/২ কাপ উষ্ণ পানি
- ১ টেবিল চামচ চিনি
প্রস্তুত প্রণালী: ১. উষ্ণ পানিতে ইস্ট এবং চিনি মেশান এবং ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
২. ইস্টের মিশ্রণটি ময়দার সাথে মেশান এবং একটি নরম ডো তৈরি করুন।
৩. ডোটি ঢেকে রাখুন এবং উষ্ণ স্থানে ১ ঘণ্টা রাখুন।
৪. দেখুন কীভাবে ডোটি ফুলে উঠছে।
বিজ্ঞান: ইস্ট চিনি খেয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি করে, যা ডোকে ফুলিয়ে তোলে এবং রুটিকে হালকা ও নরম করে।
৩. লাল বাঁধাকপির সাহায্যে অম্ল ও ক্ষারের পরীক্ষা
এই পরীক্ষাটি শিশুদের শেখাবে কীভাবে খাবারের অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব পরীক্ষা করা যায়।
উপকরণ:
- কিছু লাল বাঁধাকপি
- গরম পানি
- লেবুর রস (অম্ল)
- বেকিং সোডা (ক্ষার)
প্রস্তুত প্রণালী: ১. লাল বাঁধাকপি ছোট টুকরো করে কেটে গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন।
২. কিছুক্ষণ পরে বাঁধাকপির রস বের হয়ে একটি বেগুনি রংয়ের তরল তৈরি হবে।
৩. দুটি কাপে রস ঢালুন।
৪. একটিতে লেবুর রস যোগ করুন এবং অন্যটিতে বেকিং সোডা।
৫. দেখুন কীভাবে লেবুর রস কাপে রঙটি লাল হয়ে যায় এবং বেকিং সোডা কাপে রঙটি সবুজ বা নীল হয়ে যায়।
বিজ্ঞান: বাঁধাকপির রস একটি প্রাকৃতিক পিএইচ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে, যা অম্ল ও ক্ষার অনুযায়ী রং পরিবর্তন করে।
৪. রেইনবো মিল্ক পরীক্ষা
এই পরীক্ষাটি দেখাবে কীভাবে দুধে থাকা ফ্যাট এবং প্রোটিনের সাথে সাবান কীভাবে প্রতিক্রিয়া করে।
উপকরণ:
- পুরো দুধ
- খাবারের রং (বিভিন্ন রঙের)
- লিকুইড সাবান
- কটন বাড
প্রস্তুত প্রণালী: ১. একটি প্লেটে দুধ ঢালুন।
২. বিভিন্ন জায়গায় কয়েক ফোঁটা খাবারের রং দিন।
৩. একটি কটন বাডে লিকুইড সাবান লাগিয়ে রঙের উপর ছোঁয়ান।
৪. দেখুন রংগুলো কীভাবে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিজ্ঞান: সাবান দুধের ফ্যাটের সাথে প্রতিক্রিয়া করে এবং রঙের মিশ্রণ তৈরি করে।
৫. বেকিং সোডা এবং ভিনেগারের সাথে বিস্ফোরণ তৈরি
এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিশু শিখবে কীভাবে বেকিং সোডা ও ভিনেগার একসাথে প্রতিক্রিয়া করে গ্যাস তৈরি করে।
উপকরণ:
- বেকিং সোডা
- ভিনেগার
- একটি বেলুন
- একটি ফানেল
- বোতল
প্রস্তুত প্রণালী: ১. বেলুনের ভেতরে কিছু বেকিং সোডা ফানেলের মাধ্যমে ঢালুন।
২. বোতলে ভিনেগার ঢালুন।
৩. বেলুনটি বোতলের মুখে লাগান এবং বেকিং সোডা ভিনেগারের মধ্যে ঢালুন।
৪. দেখুন কীভাবে বেলুনটি ফুলতে শুরু করে।
বিজ্ঞান: বেকিং সোডা ও ভিনেগার প্রতিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি করে, যা বেলুনকে ফোলাতে সাহায্য করে।
উপসংহার:
খাদ্য বিজ্ঞান পরীক্ষা শিশুদের জন্য শেখার এক মজার এবং সৃজনশীল উপায়। এই ধরনের পরীক্ষাগুলো খাদ্যের বৈজ্ঞানিক দিকগুলি বোঝার সাথে সাথে কৌতূহল বাড়ায় এবং খাবারের সাথে যুক্ত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
আপনার সন্তানকে সুস্থ ও হাসিখুশি রাখতে ভালবাসার আপ্যায়নে সর্বদা পাশে আছে কুটুম ফুড