মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার (Major Depressive Disorder – MDD), যাকে সাধারণত ক্লিনিকাল বিষণ্ণতা বলা হয়, এটি বিষণ্ণতার একটি গুরুতর রূপ। এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি এবং আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
লক্ষণসমূহ
MDD-এর প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- অবিরাম দুঃখবোধ বা শূন্যতার অনুভূতি
- দিনের বেশিরভাগ সময় মন খারাপ থাকা।
- কোনো কাজে আগ্রহ বা আনন্দ হারানো
- এমনকি আগে যা আনন্দদায়ক মনে হতো, সেগুলোর প্রতিও আগ্রহ না থাকা।
- ওজন এবং ক্ষুধার পরিবর্তন
- দ্রুত ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া বা একেবারে কমে যাওয়া।
- ঘুমের সমস্যা
- অনিদ্রা (Insomnia) বা অতিরিক্ত ঘুম (Hypersomnia)।
- শারীরিক ক্লান্তি বা শক্তিহীনতা
- সাধারণ কাজেও ক্লান্তি অনুভব করা।
- নিজেকে মূল্যহীন বা অপরাধী মনে হওয়া
- অতীতের তুচ্ছ বিষয়ে অপরাধবোধ বা নিজেকে অযোগ্য মনে করা।
- মনোযোগের ঘাটতি এবং সিদ্ধান্তহীনতা
- কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা বা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা।
- আত্মহত্যার চিন্তা বা প্রচেষ্টা
- মৃত্যু বা আত্মহত্যা সম্পর্কে চিন্তা করা।
লক্ষণগুলি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে স্থায়ী হতে হবে এবং ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে হবে।
কারণসমূহ
MDD-এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- জিনগত কারণ:
- পরিবারে বিষণ্ণতার ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
- মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যের অভাব:
- সেরোটোনিন, ডোপামিন, এবং নোরএপিনেফ্রিন-এর মতো নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিকতা।
- মানসিক আঘাত বা চাপ:
- শৈশবের ট্রমা, সম্পর্কের সমস্যা, প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো, বা আর্থিক সংকট।
- শারীরিক অসুস্থতা:
- যেমন: থাইরয়েডের সমস্যা, হৃদরোগ, ক্যান্সার, বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা।
- মাদক বা অ্যালকোহল ব্যবহারের ইতিহাস:
- দীর্ঘ সময় ধরে মাদক বা অ্যালকোহল সেবন বিষণ্ণতা বাড়াতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
MDD চিকিৎসাযোগ্য এবং একাধিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- ওষুধ:
- সঠিক ওষুধ এবং ডোজ নির্ধারণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
- থেরাপি (Counseling):
- কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT): নেতিবাচক চিন্তাধারা চিহ্নিত করে তা বদলানোর জন্য কার্যকর।
- ইন্টারপারসোনাল থেরাপি (IPT): সম্পর্কের সমস্যা এবং জীবনযাপনের মান উন্নত করতে সহায়ক।
- লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
- নিয়মিত ব্যায়াম।
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
- অগ্রসর চিকিৎসা:
- যদি প্রচলিত ওষুধ বা থেরাপি কাজ না করে, তাহলে:
- ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ECT): মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা ব্যবহার করা।
- ট্রান্সক্র্যানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (TMS): মস্তিষ্কে চুম্বকীয় উদ্দীপনা প্রয়োগ।
- যদি প্রচলিত ওষুধ বা থেরাপি কাজ না করে, তাহলে:
সতর্কতা এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধ
- যদি আত্মহত্যার চিন্তা হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পরিবার বা বন্ধুদের জানাতে হবে।
- হেল্পলাইন বা মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করুন।
বাংলাদেশে “HappyMind” এবং “আশা হটলাইন”-এর মতো মানসিক সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে।